স্টাফ রিপোর্টার:কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখো মানুষের সঙ্গে ইফতার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে শুক্রবার (১৪ মার্চ) এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়।
ইফতার আয়োজনে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে প্রতি ব্লক থেকে ৭০ জন করে আসা লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ইফতারের মেন্যুতে ছিল ছোলা, মুড়ি, কলা, আলুর চপ, পিঁয়াজু, ফলমূল ও জুস। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মতো একই খাবার গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
ইফতারের আগে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘এবারের সফরে আমি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, যাতে মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। অতীতে যে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার তারা হয়েছে, তা দূর করে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আরও ভালো জীবনযাত্রার সুযোগ চায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই সংকট মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি সবসময় মানবিক আচরণ করেছে। আজকের এই আয়োজন সেই সংহতির প্রতীক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব তার শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনাদের সঙ্গে ইফতার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা আমাদের জন্য সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। আজ তিনি আপনাদের সঙ্গে ইফতার করছেন, এটি তার আপনাদের প্রতি আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার প্রতীক। আপনারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে তার কাছে উপস্থাপন করছি। আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা যায়। এই ঈদে না হোক, তবে আগামী ঈদে যেন আপনারা নিজ মাতৃভূমিতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আজ দুপুরে উপদেষ্টা ও অ্যান্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজার পৌঁছান। প্রধান উপদেষ্টা নির্মাণাধীন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। অপরদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেই সরাসরি উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চলে যান। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।