অনলাইন ডেস্ক: বিয়ের আয়ু পাঁচ থেকে সাত দিন! বিয়ে মিটলে মোটা অঙ্কের টাকা মেলে নববধূর। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার গ্রামগুলিতে এমনই এক ধরনের বিবাহের প্রবণতা বাড়ছে যা হইচই ফেলেছে সমাজমাধ্যমে।
সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমেও আলোচনায় উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার এই ‘প্লেজ়ার ম্যারেজ’। দাবি করা হয়েছে, অর্থের বিনিময়ে অস্থায়ী ভাবে পুরুষ পর্যটককে বিয়ে করে ফেলছেন সেখানকার যুবতীরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, অস্থায়ী বিয়েই আপাতত অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভোগা ইন্দোনেশিয়ায় মহিলাদের বেঁচে থাকার উপায়। ইন্দোনেশিয়ার কিছু গ্রামে এ ধরনের বিয়ের প্রচলন রীতিমতো পেশায় পরিণত হয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী এই প্রথা বেআইনি হলেও এটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত।
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে দরিদ্র পরিবারের তরুণীরা অর্থের বিনিময়ে স্বল্পমেয়াদি বিয়েতে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা পুরুষ পর্যটকদের সঙ্গে এই ধরনের সম্পর্কে জড়াচ্ছেন মহিলারা।পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার একটি জনপ্রিয় স্থান হল পুনকা। এটি বিশেষত আরব পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। কোটা বুঙ্গার পাহাড়ি বিলাসবহুল হোটেলেই স্থানীয় তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।
মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট ও কলরেট কমানোর আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
উভয় পক্ষ সম্মত হলে, দ্রুত একটি অনাড়ম্বর বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিনিময়ে ওই পর্যটক নববধূকে মোটা টাকা দেন। যত দিন এই পর্যটকেরা ইন্দোনেশিয়ায় থাকেন, ওই তরুণী স্ত্রীর মতো ব্যবহার করেন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, বিয়ের পাঁচ দিন পর ওই ব্যক্তি দেশে চলে যান এবং এই অস্থায়ী বিয়েও ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতি বিয়ে থেকে এক একজন তরুণী ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
অস্থায়ী বিয়ের মাধ্যমে নিজের খরচ এমনকি পরিবারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন সে দেশের তরুণীরা। ফলে গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিতর্কিত প্রথাটি একটি লাভজনক শিল্প হিসাবে পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।
‘প্লেজ়ার ম্যারেজ’ ইন্দোনেশিয়ায় পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। গ্রামের অনেক মহিলার এই নয়া প্রথাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার কারণ হল একলপ্তে অনেক টাকার জোগান। এর অন্যতম কারণ ইন্দোনেশিয়ায় গ্রামে বিকল্প পেশার অভাব।
প্রাথমিক ভাবে, পরিবারের সদস্য বা পরিচিতেরা পর্যটক এবং স্থানীয় মহিলাদের মধ্যে পরিচয়ের কাজটি সারতেন। সম্প্রতি এই প্রথাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণে অনেক সংস্থা গজিয়ে উঠেছে যারা এই বিয়ের ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস নামের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইন্দোনেশিয়ার এক তরুণী অস্থায়ী বিয়ে নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
তিনি এ ধরনের পর্যটকদের সঙ্গে ১৫ বারের বেশি বিয়েতে আবদ্ধ হয়েছেন। তাঁর প্রথম স্বামী ছিলেন ৫০ বছর বয়সি সৌদি আরবের পর্যটক। প্রথম বিয়ের জন্য ৭১ হাজার টাকার চুক্তি হলেও তার অর্ধেক টাকা হাতে পেয়েছিলেন। বাকি টাকা দিয়ে দিতে হয় সংস্থাকে।
আর এক তরুণী জানিয়েছেন, ২০টি বিয়ের পর তিনি এই পেশা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এক ইন্দোনেশীয়কে বিয়ে করে দুই সন্তান নিয়ে সংসার করছেন তিনি।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘নিকাহ মুত হ’ বা ‘প্লেজ়ার ম্যারেজ’ শিয়া ইসলাম সংস্কৃতির অংশ। তবে বেশির ভাগ সমাজবিদ্যার গবেষকেরা বলেছেন, এমন ধরনের বিয়ের পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।আনন্দবাজার
