০৯:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

কারাবরণের ৭ বছর পূর্তি: দেশত্যাগ নয়, আপসহীনতা বেছে নেন খালেদা জিয়া

  • রিপোর্টার
  • Update Time : ০৬:৪০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৮ Time View

দেশত্যাগ অথবা কারাগার— আওয়ামী লীগ সরকারের এমন শর্তের বিপরীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবাসকেই বেছে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্য, খালেদা জিয়া বিদেশে চলে গেলে, জেলে যেতে হতো না তাঁকে। কিন্তু সমঝোতায় না গিয়ে আবারও নিজের আপসহীনতার স্বাক্ষর রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাবরণের ৭ বছর পূর্তিতে এসব কথা জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। কেবল শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়েই বিনা অপরাধে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে, এমনটাই বলেন তারা।

এক-এগারো সময়ের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা গতি পায় ২০১৪ সাল থেকে। যখন ক্ষমতায় আজকের পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।

এর জেরে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান। উচ্চ আদালতে সেই সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। যাকে কেবলই শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দল ও সেই দলের প্রধান নেতৃত্বকে কলুষিত করা— এই সার্বিক ব্যাপারটা ঘটেছিল শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে। তার স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রেক্ষাপটেই একটি রায় দাঁড় করানো হয়েছিল।

আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, রায় ঘোষণার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া। ৭ বছর আগের এই দিনে সাজা ঘোষণার পর দ্বিতীয়বারের মত কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের নির্জন সেই কারাগারের একমাত্র কয়েদি হিসেবে ছিলেন খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকেও ছিল একইরকম শর্ত। কিন্তু কোনোভাবেই দেশ, নেতাকর্মী ও জনগণকে ছেড়ে যেতে রাজি হননি বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার কারাবরণ, এটি খালেদা জিয়ার আপসহীন ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এই যে তিনি জেনেশুনে আপসহীন ছিলেন, এটা এরশাদ আমল থেকেই শুরু হয়েছে, যা এখন প্রমাণিত।

তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি একাধিক মারফতে বিভিন্ন প্রস্তাবও এসেছিল। রাজনীতি ছেড়ে দিলে বা বিদেশে চলে গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে না। তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল মিথ্যা-বানোয়াট মামলায়। তাকে শাস্তি দিলেও তিনি মাথানত করবেন না বলে সেসময় মন্তব্য করেছিলেন খালেদা জিয়া, এমনটাই জানান বিএনপির এ সিনিয়র নেতা।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলবন্দি করতে পারা ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে অন্তরীণ করা। তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার পাঁয়তারা ছিল এটি।

কোভিড মহামারি চলাকালীন ২০২১ সালের ২৫ মার্চ, ৩ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর নির্বাহী আদেশে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে হাসপাতাল থেকে বাসা আর বাসা থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যেই কেটেছে প্রায় চার বছর।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে সরকার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের শুরুর দিনই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় নিউজ

অভিনেত্রী শাওন সহ ১২ জনকে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিল আদালত

কারাবরণের ৭ বছর পূর্তি: দেশত্যাগ নয়, আপসহীনতা বেছে নেন খালেদা জিয়া

Update Time : ০৬:৪০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশত্যাগ অথবা কারাগার— আওয়ামী লীগ সরকারের এমন শর্তের বিপরীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবাসকেই বেছে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্য, খালেদা জিয়া বিদেশে চলে গেলে, জেলে যেতে হতো না তাঁকে। কিন্তু সমঝোতায় না গিয়ে আবারও নিজের আপসহীনতার স্বাক্ষর রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাবরণের ৭ বছর পূর্তিতে এসব কথা জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। কেবল শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়েই বিনা অপরাধে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে, এমনটাই বলেন তারা।

এক-এগারো সময়ের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা গতি পায় ২০১৪ সাল থেকে। যখন ক্ষমতায় আজকের পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।

এর জেরে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান। উচ্চ আদালতে সেই সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। যাকে কেবলই শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দল ও সেই দলের প্রধান নেতৃত্বকে কলুষিত করা— এই সার্বিক ব্যাপারটা ঘটেছিল শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে। তার স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রেক্ষাপটেই একটি রায় দাঁড় করানো হয়েছিল।

আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, রায় ঘোষণার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া। ৭ বছর আগের এই দিনে সাজা ঘোষণার পর দ্বিতীয়বারের মত কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের নির্জন সেই কারাগারের একমাত্র কয়েদি হিসেবে ছিলেন খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকেও ছিল একইরকম শর্ত। কিন্তু কোনোভাবেই দেশ, নেতাকর্মী ও জনগণকে ছেড়ে যেতে রাজি হননি বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার কারাবরণ, এটি খালেদা জিয়ার আপসহীন ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এই যে তিনি জেনেশুনে আপসহীন ছিলেন, এটা এরশাদ আমল থেকেই শুরু হয়েছে, যা এখন প্রমাণিত।

তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি একাধিক মারফতে বিভিন্ন প্রস্তাবও এসেছিল। রাজনীতি ছেড়ে দিলে বা বিদেশে চলে গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে না। তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল মিথ্যা-বানোয়াট মামলায়। তাকে শাস্তি দিলেও তিনি মাথানত করবেন না বলে সেসময় মন্তব্য করেছিলেন খালেদা জিয়া, এমনটাই জানান বিএনপির এ সিনিয়র নেতা।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলবন্দি করতে পারা ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে অন্তরীণ করা। তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার পাঁয়তারা ছিল এটি।

কোভিড মহামারি চলাকালীন ২০২১ সালের ২৫ মার্চ, ৩ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর নির্বাহী আদেশে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে হাসপাতাল থেকে বাসা আর বাসা থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যেই কেটেছে প্রায় চার বছর।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে সরকার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের শুরুর দিনই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।