০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

এটিএম আজহারুলকে মুক্তি না দিলে ‘স্বেচ্ছায় কারাবরণের’ ঘোষণা ডাঃ শফিকুর রহমানের

  • রিপোর্টার
  • Update Time : ১২:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৩ Time View

স্টাফ রিপোর্টার:জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে তিনি কারাগারে যেতে চাইলে তার সামনে লাখ লাখ নোতাকর্মী দাঁড়িয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকালেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দেন জামায়াত আমির।
 
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি বলেন, বর্তমান সরকারকে স্পষ্ট করে বলছি, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের আমির আদালাতে উপস্থিত হতে চাইলে, তিনি সেখানে যাওয়ার আগে গোটা বাংলাদেশ থেকে কয়েক কোটি তার সামনে দাঁড়িয়ে যাবে। আমরা নিজেরা আগে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাবো। কিন্তু আমাদের আমিরকে স্পর্শ করতে দেবো না। আমিরের কাছে আসতে হলে আগে আমাদের বুকের উপর দিয়ে আসতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভালো দিকগুলো নিয়ে যেমন আলোচনা করি, তেমনি ব্যর্থতারও সমালোচনা করি। দুর্ভাগ্য হলো, সরকারে আসার পর আপনারা মামলা থেকে মুক্তি নিলেন, অথচ আমাদের মামলা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না! তাই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার আগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ব্যবস্থা করুন।’

একই অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির বলেন, পটপরিবর্তন ৬ মাসের অধিক হয়ে গেল। সপ্তম মাসে পড়ে গেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন তাকে (এটিএম আজহারুল ইসলাম) কারাগারে থাকতে হবে! গণভবনে গত ৫ আগস্ট সুনির্দিষ্টভাবে আমরা কয়েকজনের কথা বলেছিলাম। এ ছাড়া নির্বিশেষে সব মজলুমকে মুক্তি দিতে বলেছিলাম। ওই সময় যাদেরকে বন্দি করা হয়েছিল, তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি জুলুম যাদের উপর করা হয়েছে, তাদের একজন কেন জেলের ভেতরে থাকবেন! তাই মনের এই কষ্ট থেকে বলেছি যে আমার এখন আর জেলের বাইরে থাকার কোনো সার্থকতা নেই। এর প্রতিবাদে আমি নিজেও এখন জেলে যেতে চাই। আমি স্বেচ্ছায় যাবো। 

তিনি বলেন, সরকার যেন আমাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমার ভাইয়েরা বলেছেন, আমাকে তারা একা ছাড়বেন না। লাখো কর্মী আমাকে সঙ্গে দেবেন। এজন্য আমি আমার ভাইদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি বলতে চাই, লাখো লাগবে না, আমি একাই যাবো ইনশাআল্লাহ। কারণ এই জমিনকে ঠিক করার জন্য আমার সহকর্মীদেরকে বাহিরে থাকতে হবে। সবাই ভেতরে গেলে জমিনের জঞ্জাল পরিষ্কার করবে কে? আমার সহকর্মীরা থাকুক, জঞ্জাল পরিষ্কার করুক। আর আমি মজলুমের প্রতীক হিসেবে প্রতিবাদ হিসেবে জেলে চলে যাই।
 
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার তো আমাকে দফায় দফায় জেলে নিয়েছে। আমাকে আগের দিন নিয়েছে, পরের দিন ছেড়েছে- এমন কোনো ইতিহাসও নেই। আমাকে দীর্ঘ সময় জেলে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তাই ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এখন এই দেশবাসীর সাক্ষী থাকুক, ফ্যাসিজমের বিদায়ের পরও আবার একই ব্যক্তি জেলে যাচ্ছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে খেললে, আমরা দাবার গুটি হবো না। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলে বার বার একটা কথা শুনতাম, খেলা হবে। কিন্তু সেই খেলা আমরা আর দেখতে চাই না। জাতির ভাগ্য নিয়ে যারা খেলা করেন, তারা দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারে না। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদেরকে তাড়িয়েছে, কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি।’    
 
এদিকে, বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছিল। মামলাটি ৯ নম্বর তালিকায় ছিল। কিন্তু ৫ নম্বর আইটেম পর্যন্ত শুনানি করতেই আদালতের সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে মামলাটি সময়ের অভাবে শুনানি হয়নি।
 
গত ২৩ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
 
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চে এক বিচারপতি না থাকায় আদালত শুনানির দিন পিছিয়ে দেন।
 
এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে জামায়াত নেতা আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা।
 
তবে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এই রায়ের বিরুদ্ধেও রিভিউ আবেদন করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় নিউজ

অভিনেত্রী শাওন সহ ১২ জনকে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিল আদালত

এটিএম আজহারুলকে মুক্তি না দিলে ‘স্বেচ্ছায় কারাবরণের’ ঘোষণা ডাঃ শফিকুর রহমানের

Update Time : ১২:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার:জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে তিনি কারাগারে যেতে চাইলে তার সামনে লাখ লাখ নোতাকর্মী দাঁড়িয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকালেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দেন জামায়াত আমির।
 
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি বলেন, বর্তমান সরকারকে স্পষ্ট করে বলছি, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের আমির আদালাতে উপস্থিত হতে চাইলে, তিনি সেখানে যাওয়ার আগে গোটা বাংলাদেশ থেকে কয়েক কোটি তার সামনে দাঁড়িয়ে যাবে। আমরা নিজেরা আগে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাবো। কিন্তু আমাদের আমিরকে স্পর্শ করতে দেবো না। আমিরের কাছে আসতে হলে আগে আমাদের বুকের উপর দিয়ে আসতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভালো দিকগুলো নিয়ে যেমন আলোচনা করি, তেমনি ব্যর্থতারও সমালোচনা করি। দুর্ভাগ্য হলো, সরকারে আসার পর আপনারা মামলা থেকে মুক্তি নিলেন, অথচ আমাদের মামলা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না! তাই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার আগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ব্যবস্থা করুন।’

একই অনুষ্ঠানে জামায়াত আমির বলেন, পটপরিবর্তন ৬ মাসের অধিক হয়ে গেল। সপ্তম মাসে পড়ে গেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন তাকে (এটিএম আজহারুল ইসলাম) কারাগারে থাকতে হবে! গণভবনে গত ৫ আগস্ট সুনির্দিষ্টভাবে আমরা কয়েকজনের কথা বলেছিলাম। এ ছাড়া নির্বিশেষে সব মজলুমকে মুক্তি দিতে বলেছিলাম। ওই সময় যাদেরকে বন্দি করা হয়েছিল, তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি জুলুম যাদের উপর করা হয়েছে, তাদের একজন কেন জেলের ভেতরে থাকবেন! তাই মনের এই কষ্ট থেকে বলেছি যে আমার এখন আর জেলের বাইরে থাকার কোনো সার্থকতা নেই। এর প্রতিবাদে আমি নিজেও এখন জেলে যেতে চাই। আমি স্বেচ্ছায় যাবো। 

তিনি বলেন, সরকার যেন আমাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু আমার ভাইয়েরা বলেছেন, আমাকে তারা একা ছাড়বেন না। লাখো কর্মী আমাকে সঙ্গে দেবেন। এজন্য আমি আমার ভাইদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি বলতে চাই, লাখো লাগবে না, আমি একাই যাবো ইনশাআল্লাহ। কারণ এই জমিনকে ঠিক করার জন্য আমার সহকর্মীদেরকে বাহিরে থাকতে হবে। সবাই ভেতরে গেলে জমিনের জঞ্জাল পরিষ্কার করবে কে? আমার সহকর্মীরা থাকুক, জঞ্জাল পরিষ্কার করুক। আর আমি মজলুমের প্রতীক হিসেবে প্রতিবাদ হিসেবে জেলে চলে যাই।
 
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার তো আমাকে দফায় দফায় জেলে নিয়েছে। আমাকে আগের দিন নিয়েছে, পরের দিন ছেড়েছে- এমন কোনো ইতিহাসও নেই। আমাকে দীর্ঘ সময় জেলে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তাই ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এখন এই দেশবাসীর সাক্ষী থাকুক, ফ্যাসিজমের বিদায়ের পরও আবার একই ব্যক্তি জেলে যাচ্ছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে খেললে, আমরা দাবার গুটি হবো না। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলে বার বার একটা কথা শুনতাম, খেলা হবে। কিন্তু সেই খেলা আমরা আর দেখতে চাই না। জাতির ভাগ্য নিয়ে যারা খেলা করেন, তারা দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হতে পারে না। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদেরকে তাড়িয়েছে, কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি।’    
 
এদিকে, বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এসেছিল। মামলাটি ৯ নম্বর তালিকায় ছিল। কিন্তু ৫ নম্বর আইটেম পর্যন্ত শুনানি করতেই আদালতের সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে মামলাটি সময়ের অভাবে শুনানি হয়নি।
 
গত ২৩ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
 
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চে এক বিচারপতি না থাকায় আদালত শুনানির দিন পিছিয়ে দেন।
 
এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে জামায়াত নেতা আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা।
 
তবে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এই রায়ের বিরুদ্ধেও রিভিউ আবেদন করেন তিনি।